Sunday, June 7, 2020

আমার শহর

উঁহু... আমি কলকাতায় বেড়ে উঠিনি, কলকাতার নিকটবর্তী একটা মফঃস্বলে আমার জন্ম।সেই মফঃস্বলের গন্ধ আমার রক্তে। দিনেমারডাঙ্গা, না এই নামে খুঁজলে আর তাকে পাওয়া যাবে না। তার পোষাকী নাম ভদ্রেশ্বর। হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনের পথে গঙ্গার সমান্তরালে যে শহরগুলো ঔপনিবেশিক শাসনের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে, ভদ্রেশ্বর তাদের মধ্যে অন্যতম। একসময়ে এখানে ডেনমার্কের অধিবাসীদের কুঠি ছিল, তার থেকেই নাম দিনেমারডাঙ্গা। পাশেই এনার অবশ্য ভাই-বোনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেমন চন্দননগর, চুঁচুড়া, হুগলী, ব্যান্ডেল আরও অনেকেই। চন্দননগরের ডাকনাম অবশ্য ফরাসডাঙ্গা, নাম থেকেই আন্দাজ করতে পারেন এখানে ফরাসীদের ঘাঁটি ছিল।চুঁচুড়া অবশ্য ছিল ওলন্দাজদের দখলে। তা এই দিনেমারডাঙ্গায় ইংরেজ ও ফরাসীদের ঘাঁটি তো ছিলই, কিন্তু এর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে জার্মান এবং অস্ট্রিয়ান সৈন্যরাও কুঠি গড়েছিল। এ সম্পর্কে সাহিত্যিক অন্নদাশংকরের 'কোতরং' নামের ছড়ার কথা বলতেই হয়
"হাঁসের প্রিয় গুগলি,
পোর্তুগীজের হুগলী।
গুণীর প্রিয় তানপুরা,
ওলন্দাজের চিনসুরা।
চোরের প্রিয় আঁধার ঘর,
ফরাসীদের চন্নগর।
শিশুর প্রিয় চানাচুর,
দিনেমারের সিরামপুর।
লোকের প্রিয় ভোট রং,
পিতৃকুলের কোতরং।"

ভদ্রেশ্বর নামটায়ও ইতিহাসের ছোঁয়া আছে। মনসামঙ্গলের সবচেয়ে পুরোনো পাঁচালিকার ১৫ শতকের কবি বিপ্রদাস পিপলাইয়ের লেখায় 'ভদ্রেশ্বর' নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভদ্রেশ্বর শিবমন্দির থেকেই এই নামের উৎপত্তি। শোনা যায় গঙ্গার তীরে এই মন্দিরটি প্রায় পাঁচশো বছরের পুরানো।   কথিত আছে, ত্রেতাযুগে বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্র যখন আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন এখানে মহাদেব লিঙ্গের রূপ নিয়ে মাটি থেকে উঠে আসেন। বর্ধমানের মহারাজার অর্থ সাহায্যে তৈরি ছোট একটি মন্দির ছিল এখানে, দেখাশোনার অভাবে যখন এই মন্দির ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে তখন সখীবালা দাস নামের এক নিঃসন্তান বিধবা এবং তার বাবা শ্যামসুন্দর মন্ডলের প্রচেষ্টায় আবার তৈরি হয় এই মন্দির। ভদ্রেশ্বরে অবশ্য আরেকটি প্রাচীন অন্নপূর্ণা মন্দির আছে যা রয়েছে তেলিনীপাড়া অঞ্চলে। এই তেলিনীপাড়া নামটা কোথা থেকে এসেছে জানেন তো? এখানে ফরাসীদের তেলেঙ্গি সৈন্যরা থাকতেন বলে জায়গাটার নাম হয়ে যায় তেলেঙ্গিপাড়া, যা পরে অপভ্রংশে এসে দাঁড়ায় তেলেনীপাড়া। তবে,  ভদ্রেশ্বর এবং তার পাশাপাশি মানকুন্ডু ও চন্দননগর  জগদ্ধাত্রীপুজোর জন্য বিখ্যাত। সেই গল্প  আরেকদিন হবে না হয়?


আরও অনেক গল্প নিয়ে আসছি শিগগির। দেখা হবে।










































































































No comments:

Post a Comment